বাংলাদেশ অনলাইন : | বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতির তালিকায় এশিয়ায় বাংলাদেশ পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে। এরমধ্যে ২০২২ সালেই দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থান (আইওএম) এর ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৪ এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
৭ মে (মঙ্গলবার) ঢাকার বনানীতে হোটেল শেরাটনে আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ এ বৈশ্বিক রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রথমবারের মতো সংস্থাটি বাংলাদেশে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করল। রেমিটেন্স পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকার পর এশিয়ার বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ ছিল দুর্যোগ। ভয়াবহ ও ব্যাপক বন্যার অভিজ্ঞতা অর্জনকারী পাকিস্তানে ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘দুর্যোগ বাস্তুচ্যুতি’ (যা ৮০ লাখেরও বেশি) রেকর্ড করা হয়েছে। এ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্যোগ বাস্তুচ্যুতি ফিলিপাইনে রেকর্ড করা হয়েছিল (প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন)। তারপরই অবস্থান করছে চীন (৩.৬ মিলিয়নেরও বেশি)।
এতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে ভারত ও বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য দুর্যোগ বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে। ২০২২ সালে সংঘাতের কারণে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি হয়েছে মিয়ানমারে (যা ১০ লাখের বেশি)। এটি দেশটির জন্য সর্বকালের সর্বোচ্চ এবং দেশটির সামরিক ও অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘাতের ফলাফল বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। কিরগিজস্তানের পর জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে মিয়ানমারে দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যক সংঘাতপূর্ণ বাস্তুচ্যুতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিধ্বংসী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া জলবায়ু অভিঘাতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপপ্রবাহ এবং বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। দীর্ঘ বর্ষা ঋতু, উষ্ণ আবহাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান খরা সবই এই অঞ্চলে ‘নতুন স্বাভাবিক’ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
২০২২ সালে, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল এবং একই বছরে, বর্ষা-মৌসুমের বন্যা বিশেষত পাকিস্তানে ধ্বংসের চিহ্ন রেখে গেছে। পাকিস্তানে ২০২২ সালের বন্যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ছিল, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন মারা গিয়েছিল এবং ৮০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। ২০২২ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড ভাঙা বন্যা হয়েছিল, যা ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। যার ফলে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হঠাৎ শুরু হওয়া বিপর্যয় মানুষের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, প্রায়শই সতর্কতা ছাড়াই, সমগ্র সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা কঠিন বা অসম্ভব করে তোলে। জলবায়ু সম্পর্কিত বন্যা, হারিকেন, দাবানল এবং অন্যান্য আকস্মিক দুর্যোগের ফলে কিভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে তার বিভিন্ন উদাহরণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি স্থানে বন্যা খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চরম বন্যা আরো ঘন ঘন হচ্ছে এবং এর মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, জনসংখ্যার বেশিরভাগকে বিশেষ করে দুর্বল সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করছে।
Posted ১২:০৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh